নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ২৭টিকেই ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই দপ্তর থেকে ‘রেড জোন’ বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষিত এলাকার ম্যাপ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে দেয়া জরুরি বার্তায় ‘রেড জোন’ এলাকায় লকডাউনের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয় সিভিল সার্জনকে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কবে নাগাদ রেড জোন লকডাউনের আওতায় আসবে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন বলছেন, শুরুতেই ২৭টি ওয়ার্ডকে একযোগে লকডাউনের আওতায় আনতে চাচ্ছেন না। তারা চাচ্ছেন, মডেল হিসেবে নগরীর ছোট্ট একটি এলাকা লকডাউন করে সাধারণ জনগকে পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করতে। সব শর্ত মেনে মডেল এলাকায় লকডাউন সফল করা গেলে পরে অপর ওয়ার্ডগুলোকে লকডাউনের আওতায় আনা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘রেড জোন’ এলাকাগুলোকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ কাজ করবে।
পরীক্ষামূলক লকডাউন হতে পারে যে কোন একটি এলাকা। কিংবা বরিশাল নগরীর যে কোন এক বা দুটি ওয়ার্ড। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে লকডাউনের আওতা বাড়াতে চায় প্রশাসন। আক্রান্তের বিষয়টি বিবেচনায় আসলে নগরীর ১২ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ড প্রথম দিকে লকডাউনের আওতায় আসতে পারে। তবে ওই দুটো ওয়ার্ডে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার রয়েছে। এই ক্ষেত্রে প্রশাসন বিকল্প পথ বেছে নিতে পারে। জানা গেছে, বরিশাল সিটি এলাকায় ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৩ জনের বসবাস। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৬৯ জন। এই নগরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫২ জন। সেই হিসেবে আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই বরিশাল নগরীর বাসিন্দা। একই সঙ্গে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন। পুরো বিভাগে মারা যাওয়া ৩৩ জনের মধ্যে বরিশাল নগরীর মারা যাওয়ার সংখ্যাও এক-চর্তুথাংশ প্রায়। এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডকে রেড জোনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে ‘রেড জোন’র ম্যাপ পাঠানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের দেয়া নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। রেড জোন ঘোষিত এলাকায় লকডাউন ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে । ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে বরিশালের সংশ্লিষ্ট সব দফতর প্রধানদের চিঠি দেয়া হয়েছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশন লকডাউনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করবে। সেক্ষেত্রে লকডাউন বাস্তবায়ন প্রশ্নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব নির্দেশনা রয়েছে তার সব আয়োজন সম্পন্ন করে এলাকাগুলো লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জেলা প্রশাসক এসএস অজিয়র রহমান বলেন, ২৭টি ওয়ার্ড একসঙ্গে লকডাউন করার ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। যেটা অনেক কষ্টসাধ্য, তাই এখনই আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। তাছাড়া এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে জনগণ কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সে সম্পর্কেও আমাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তাই প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি এলাকা লকডাউন করব। ওই নির্দিষ্ট এলাকার লকডাউনকালীন সব পরিস্থিতি দেখে পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের আওতা বাড়ানো হবে।
Leave a Reply